Site icon Jamuna Television

চুপকথার রেস্টুরেন্ট, সব কথা ইশারায়!

আজব রেস্টুরেন্ট। এখানে প্রবেশ করলে কেউ আপনাকে মুখে স্বাগত জানাবে না। বরং হাত নেড়ে মুখের হাসি দিয়ে আপনাকে স্বাগত জানানো হবে। এমন একটি রেস্টুরেন্টের নাম চু ফু ক্য। এটি যেন একটি চুপকথার রেস্টুরেন্ট।

এ রেস্টুরেন্টে সেবাদানকারীরা সবাই মূক ও বধির। তারা কারও কথা শুনতে পান না। তাদের ভাষা হচ্ছে ইশারা-ভাষা। এ রেস্টুরেন্টে ওয়েটার ও কাস্টমারের মধ্যে ‘অনুবাদক’ হিসেবে কাজ করেন ওয়ান সুয়ে হুয়া।

রেস্টুরেন্ট চালুর প্রথম ছয় মাসে তার গলার খুব খারাপ অবস্থা হয়। কাস্টমার হয়তো ডাকছেন কিন্তু বধির ওয়েটার শুনতে পাচ্ছেন না। তখন তিনি কাস্টমারের হয়ে জোরে চিৎকার করে ওয়েটারকে ডাকেন। এতে তেমন কাজও হতো না। বধির ওয়েটারদের আবার কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না। রেস্টুরেন্টে কিভাবে সেবা দিতে হয়, তা তাদের শিখিয়ে দিতে হয়েছে।

মিস্টার ছেন এ রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠাতার মাধ্যমে বধিরদের কর্মসংস্থান করেছেন। তিনি আশা করেন, এতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বধিরদের যোগাযোগ বাড়বে। তারা বধিরদের আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

২০১৭ সালে তিনি বেইজিংয়ে প্রথমবারের মতো একটি নির্বাক রেস্টুরেন্ট দেখেন তখন তিনি নিজের জন্মস্থান নান ছাং শহরে এমন একটি রেস্টুরেন্ট খুলতে আগ্রহী হন। তিনি স্থানীয় প্রতিবন্ধী কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ১০ জন বধির নিয়োগ করেন। শুরুতে ব্যবসা ভালো ছিল না।

কর্মীরা প্রতিনিয়ত থালাবাসন ভেঙে ফেলতেন। কাস্টমারের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারতেন না বলে তারা রেস্টুরেন্ট ছেড়ে চলে যেতেন। তবে মিস্টার ছেন হাল ছাড়েননি। তিনি কিছু টোকেন তৈরি করলেন, যেগুলো ব্যবহার করে কাস্টমার অর্ডার দিতে পারেন।

অন্যদিকে প্রতিটি টেবিলে স্থাপন করা হয় একটি করে বেল। বেলটি আবার বধির ওয়েটারদের কবজিতে আটকানো একটি যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। কাস্টমার বেল বাজালে কবজির যন্ত্র কম্পন সৃষ্টি করে। এভাবে ধীরে ধীরে ব্যবসা জমে ওঠে। এখন বধির ওয়েটাররা খুব ভালো কাজ করতে পারেন।

শুরু থেকে এ রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন দুজন মেয়ে ওয়েটার। ছেন সিয়াও ইয়ান এবং চৌ থিং। রেস্টুরেন্টের কাস্টমারদের অনেকেই এখন তাদের পরিচিত। ব্যস্ত সময়ে কাস্টমাররা কখনও কখনও ওয়েটার না ডেকে নিজেরাই খাবার নিয়ে নেন কাউন্টার থেকে। ওয়েটারদের ছোটখাটো ভুল তারা উপেক্ষা করেন।

এ জন্য মিস্টার ছেন কাস্টমারদের ধন্যবাদ জানান। কারণ তাদের এমন আচরণ ওয়েটারদের আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তিনি এখন অন্য বড় হোটেল বা রেস্টুরেন্টে নির্বাক এলাকা চালু করতে আগ্রহী। বধিরদের জন্য আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান। তিনি চান, তারাও নিজের হাতে সুন্দর জীবন গড়ে তুলুক।

Exit mobile version