Site icon Jamuna Television

ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কি ৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে তুলতে চান?

একটি ফেসবুক আইডি। ইন্ট্রোতে লেখা আছে “ভারতের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান”, “৭৫’ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেক বার”! কাভার ফটোতে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ছবি দিয়ে তাকে ‘ভারত বিরোধী আন্দোলনে স্বাধীন বাংলার প্রথম শহীদ হিসেবে’ উল্লেখ করা হয়েছে। স্বভাবতই এই ফেসবুক আইডিকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেটি আরও তুঙ্গে উঠে যখন দেখা যায় সেই আইডির ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের নামে খোলা। যদিও শ্যামলের দাবি, এটি ফেক আইডি। এমন বক্তব্য তিনি নীতিগতভাবে সমর্থন করেন না।

শ্যামলের নামে চলা এই আইডির স্ক্রিনশট পোস্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা করছেন ছাত্রলীগের অনেকেই। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যদি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আর দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড দাবী করেন, তবে ‘শ্যামল এন্ড গং’ এর এই দুঃসাহস আর স্পর্ধার জবাবটা সুদে আসলে বুঝিয়ে দেবেন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র জিএস হিসেবে বলছি, শ্যামল ও তার সংগঠন ছাত্রদল এহেন ধৃষ্টতার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে এবং যেকোনো মূল্যে সকল অপতৎপরতা প্রতিরোধ করা হবে!’

সাবেক বর্তমান ছাত্রলীগ নেতারা ছাড়াও সমালোচনা করছেন সাধারণ নেটিজেনরাও। ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে ইঙ্গিতপূর্ণ এই বক্তব্য মেনে নিতে পারছেন না তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি ছাত্রদলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পরদিন থেকে আমার নামে ফেসবুকে অনেক ফেক আইডি খোলা হয়েছে। বর্তমানে আমার নিজের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। যারা এসব আপত্তিকর, বিভ্রান্তিকর ও বিভাজন সৃষ্টিকারী কথা লিখেছে তাদের বক্তব্যের কোনো দায় আমাদের নেয়ার সুযোগ নেই।

শ্যামল বলেন, ছাত্রদল প্রতিহিংসা ও বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তো বটেই, ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি ৭৫’র হত্যাকাণ্ডকে কোনোভাবেই সমর্থন করি না। নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ সম্পন্ন কোনো মানুষই এটা সমর্থন করবে না।

চলতি অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে নিজের এ বিষয়ে ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থানায় জিডি করেছেন বলে জানান। জিডির একটি কপিও পাঠান তিনি।

তাতে দেখা যায়, গত ৬ অক্টোবর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় দায়ের করা জিডিতে শ্যামল লিখেছেন, “গত ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখ হইতে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে অজ্ঞাতনামা বিবাদী কর্তৃক আমার ফেইসবুক আইডি নং Iqbal hossain Shamol হ্যাক করিতেছে। বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডায়েরী করিতে একান্ত ইচ্ছুক।”

এদিকে, জিডিটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, আমি সাধারণত তদন্তের দায়িত্ব পাই না। আর এটা তো সাইবার ক্রাইমের কাজ। জিডিটি ইস্যু হওয়ার পর আমি জিডিকারীর দেয়া ফোন নম্বরে ডকুমেন্টের জন্য ফোন দেই। তখন একজন নারী ফোন ধরে আমাকে বলেন আপনি ‘রং নম্বরে’ ফোন দিয়েছেন। জিডিকারীর সাথে ওই নম্বর থেকে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।’

জিডিতে দেয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে জানা যায় এটি ঘাটাইলের একজন অবসরে যাওয়া কৃষি কর্মকর্তার ফোন নম্বর। তিনি জানান, শ্যামলকে তারা কেউ চেনেন না, কোনোদিন দেখেননি। তার স্ত্রী পুলিশের ফোন রিসিভ করে থাকতে পারেন।

এই ফোন নম্বরটি কীভাবে এলো? জিডিকারী ইকবাল হোসেন শ্যামল কি নিজে থানায় গিয়ে জিডি করেছেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ডিউটি অফিসার শাহ আলম জানান জিডিকারী ব্যক্তি ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কিনা তা তিনি বলতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, এসব জিডির ক্ষেত্রে যার আইডি তিনি নিজে থানায় না এলে তো আমরা জিডি নেই না। নিখোঁজ বা অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রেই কেবল অন্য কেউ জিডি করেন। এক্ষেত্রে জিডিকারী নিজে থানায় না এলে তো জিডি নেয়ার কথা না।

এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন শ্যামলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, জিডি করতে তিনি নিজে থানায় যাননি। তার ভাষ্য, ‘আমার পক্ষ থেকে যিনি জিডিটি করেছেন তিনিই এই ফোন নম্বরটি দিয়েছেন।’

Exit mobile version