Site icon Jamuna Television

তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে ধরলেন হাজারো মানুষ, মাইকে ফুঁ দিলেন কবিরাজ!

বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে কাক ঢাকা ভোর থেকে তেল পানির বোতল নিয়ে ছুঁটছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। সবার গন্তব্য পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চর পলাশ গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।

গতকাল শনিবার সকাল আটটা বাজার আগেই নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে উঠে ফসলের পতিত ওই বিশাল মাঠ। এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজ আসবেন বলে মঞ্চ ও তৈরি করা হয়। তিনি পানি ও তেলে ফুঁক দিবেন। তার ঝাড়ফুকের পানি খেলে এবং তেল মালিশ করলে সকল প্রকার রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ও মনোবাসনা পূরণ হবে। এমন বিশ্বাস থেকেই হাজার হাজার নর-নারীর উপস্থিতি।

হাজার হাজার নর-নারীর উপস্থিতি সামাল দিতে মঞ্চে এসে উঠলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু ও সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটু। তারা উপস্থিত লোকজনকে ধৈর্য্য ধরে শান্ত থাকার আহ্বান জানালেন।

অপেক্ষার পালা শেষ হলো হাজারো মানুষের। কাঠুরিয়া কবিরাজ এলেন মঞ্চে। সকাল ১১টার দিকে পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়নের পাইলাবর গ্রামের কাঠুরিয়া কবিরাজ এসে হাজির হলেন। তিনি সমাগত লোকজনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।

এ সময় তিনি দাবি করেন যে, “আমি মাইকে ফুঁক দিবো, আর মাইকে আমার ফুঁকের আওয়াজ যে পর্যন্ত যাবে – সে পর্যন্ত তেল-পানির বোতলে ফুঁক কাজ করবে।”

বক্তব্য শেষ হতে না হতেই কাঠুরিয়া কবিরাজ মাইকে ফুঁক দিলেন। আর চারপাশে অবস্থান নেয়া হাজার হাজার নর-নারী তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে ধরলেন। রোগবালাই মুসিবত দূর এবং মনোবাসনা পূরণের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন নর-নারীরা।

এ ব্যাপারে কথা হলে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রেণু জানান, কিছু ভক্তের অনুরোধে এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজের আগমন ঘটে। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে আসেন।

পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান জানান, তিনি এ খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। সেখানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্রুততম সময়ে এ আয়োজন শেষ করেন।

এ ব্যাপারে দেশের সর্ববৃহৎ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সাবেক ইমাম কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের খতীব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের গবেষক মুফতী মাওলানা এ কে এম সাইফুল্লাহ’র সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এভাবে মাইকে ফুঁক দেয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের আয়োজন প্রতারনার ও শিরকের শামিল।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সবুজ মিয়া নামের ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়নের পায়লাবের গ্রামের অধিবাসী। তিনি বনে কাঠ কেঠে জীবিকা নির্বাহ করেন। সপ্তাহে চার দিন কাঠ কাঠেন এবং তিন দিন কবিরাজি করে থাকেন। স্বপ্ন প্রাপ্ত হয়ে এ ধরনের কবিরাজি করেন বলে দাবি তার।

Exit mobile version