Site icon Jamuna Television

পাখির বাসা রক্ষায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাইলো জেলা প্রশাসন

রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে আলোচিত পাখির বাসা রক্ষায় সরকারের কাছে বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বাগানের যেসব গাছে শামুকখোল পাখিগুলো বাসা বেঁধেছে, সেগুলো থেকে বাগান মালিকের কতো ক্ষতি হতে পারে, তা নিরূপণের পর জেলা প্রশাসন থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানান, এই পাখিগুলোকে তাড়িয়ে দেয়া থেকে রক্ষার পর এর একটা স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি ওই আমবাগানে সরেজমিন জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, মোট ৩৮টি আমগাছে রয়েছে পাখির বাসা। বছরে গাছগুলো থেকে আম উৎপাদন ও সম্ভাব্য মূল্য বিবেচনায় নিয়ে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা বাগান মালিক বা ইজারাদারকে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।

তিনি জানান, বিনিময়ে বাগান থেকে পাখিগুলোকে তাড়িয়ে দেয়া যাবে না। এমনকি গাছগুলোরও কোনো ক্ষতি করা যাবে না। জেলা প্রশাসক আশা করেন, শিগগির মন্ত্রণালয় থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড় করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত চারবছর থেকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধে রয়েছে। তারা বর্ষা শেষে এই বাগানে গিয়ে বাচ্চা ফোটায়। শীতের শুরুতে বাচ্চারা উড়তে শিখলে তাদের নিয়ে চলে যায়। এবারও পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে। তবে বাচ্চারা এখনও উড়তে শেখেনি। কিন্তু এবছর ইজারাদার আম উৎপাদনের জন্য বাগানের পরিচর্যা করতে চান।

গত ২৯ অক্টোবর বাগানের মালিক বাসা ভেঙে আমগাছ খালি করতে শুরু করে। তখন স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী বাসা ভাঙতে বাধা দেন। পরে তাদের কারণে আমবাগান ইজারাদার আতাউর রহমান পাখিদের বাসা ছাড়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন।

এ সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর পাখির আবাসস্থল রক্ষার উদ্যোগ নেয় রাজশাহী জেলা প্রশাসন। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ৩০ অক্টোবর বাঘার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের ওই আমবাগান পরিদর্শনে যান। তারা পাখিদের বাসা ভাঙা যাবে না বলে জানান।

এছাড়া মহাপরিচালকের নির্দেশে একই দিন ঘটনাস্থলে যান র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান। এসময় বাগানে থাকা পাখির বাসা ভাঙা যাবে না এবং এখন থেকে র‌্যাব বাগানটি পর্যবেক্ষণ করবে বলেও জানান। এরই মধ্যে বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারুমিতা রায়। এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে আদেশ দেন।

খোর্দ্দ বাউসা গ্রামকে কেন অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান হাইকোর্ট। পাশাপাশি অভয়ারণ্য ঘোষণা করলে ওই আমবাগান ইজারাদারদের কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা ৪০ দিনের মধ্যে জানাতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরপরই জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।

Exit mobile version