Site icon Jamuna Television

রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিতে হবে: অ্যামনেস্টি

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারনেশনাল।

আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

প্রথম আন্তর্জাতিক শরণার্থী ফোরাম উপলক্ষে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, দু’বছরেরও বেশি সময় আগে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া ৫ লাখের বেশি শিশু এখন পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে যেতে পারেনি।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার আয়োজনে জেনেভাতে আগামী ১৬-১৮ ডিসেম্বর প্রথম আন্তর্জাতিক শরণার্থী ফোরাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে; যেখানে শিক্ষাকে মূল ছয়টি প্রতিপাদ্যের একটি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।

‍”কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে থাকা রোহিঙ্গা শিশুদেরকে একটি হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মে পরিণত হতে দেয়া যায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটা মেনে নিতে হবে যে, এই শিশুরা শিগগিরই মিয়ানমারে তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে সক্ষম হবে না। তারা যেখানে অবস্থান করছে সেখানে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে নিজেদের ভবিষ্যতকে ক্রমেই হারিয়ে যেতে দেখবে- এমনটা হতে পারে না,” বলেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি।

তিনি আরও বলেন, “যখন একটি শিশু শিক্ষা গ্রহণ করে তখন সবাই উপকৃত হয়। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়কেই কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় অধিবাসী সব শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে অবশ্যই জোরালো পদক্ষেপ ও দায়িত্ব নিতে হবে। শরণার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের ওপর যেসব বিধিনিষেধ বর্তমানে রয়েছে তা উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এক্ষেত্রে নিজেদের পদক্ষেপ শুরু করতে পারে।”

অ্যামনেস্টি বলেছে, কক্সবাজারের স্থানীয়রা শিক্ষাক্ষেত্রে দুটি কারণে অত্যন্ত ভুক্তভোগী। প্রথমত, ওই এলাকায় শিক্ষক সংকট রয়েছে, কারণ শিক্ষিত তরুণরা ভালো বেতনের চাকরির জন্য প্রায়ই মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার উচ্চহার; যার পেছনে জীবন ধারণের উচ্চব্যয় মেটানোর তুলনায় স্থানীয় জনসাধারণের আয়ের ক্রমহ্রাস এবং এর ফলে দ্রুত চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য সন্তানদের ওপর তৈরি হওয়া চাপ অনেকটা দায়ী।

২০১৯ সালে অক্টোবর মাসে ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ-এর প্রকাশিত বহুখাত ভিত্তিক প্রয়োজন মূল্যায়ন (MSNA) প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কক্সবাজারে জরিপ করা ১৩১১ টি পরিবারের প্রায় এক তৃতীয়াংশতে অন্তত একজন প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলগামী বয়সের শিশু পাওয়া গেছে যারা স্কুলে যাচ্ছে না।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় শিশুদের শিক্ষার জন্য গৃহীত ‘২০১৯ জয়েন্ট রেসপন্স প্লান’ এর প্রয়োজনীয় ৫০৮ কোটি টাকার (৫৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার) তহবিলের মাত্র ৪০ শতাংশ অক্টোবর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার পেয়েছে। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর কর্তাব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন শিক্ষার জন্য এই অনুদান ২০২০ সালে আরও কমতে পারে।

যেখানেই থাকুক সেখানকার অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি নিজেদের অধিকার দাবি করতে পারার মতো যোগ্য করে গড়ে তুলতে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য যথাযথ মানসম্পন্ন ও স্বীকৃত শিক্ষার সুযোগ দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

“কক্সবাজারের সব শিশু নিজেদের অধিকার হিসেবে মানসম্পন্ন শিক্ষা পাবে এটা সকলের জন্য মঙ্গলজনক। শিক্ষা ওই অঞ্চলের সব সম্প্রদায়কে অগ্রগতির দিকে নিতে পারে। জাতীয় অর্থনীতির ওপর বোঝা হিসেবে নয়, বরং বিষয়টিকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখা উচিত, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের সুফল বয়ে আনবে। কিন্তু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করলে তা খুবই নেতিবাচক পরিণতি ডেকে আনতে পারে,” বলেছেন সাদ হাম্মাদি।

Exit mobile version