Site icon Jamuna Television

অনিয়মের অভিযোগে সাদুল্লাপুরে ধান সংগ্রহ স্থগিত: তালিকা যাচাইয়ের নির্দেশ

অনিয়মের অভিযোগে সাদুল্লাপুরে ধান সংগ্রহ স্থগিত: তালিকা যাচাইয়ের নির্দেশ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে সরকারিভাবে বোরো ধান ক্রয়ে কৃষকের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে দুটি খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে লটারিতে নির্বাচিত ২ হাজার ১২০ জন কৃষকের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করে স্বচ্ছ তালিকার তৈরির পর ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ। রবিবার দুপুরে গাইবান্ধা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে, গত ১৮ মে সাদুল্লাপুরে ধান সংগ্রহে কৃষক তালিকায় অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে যমুনা টেলিভিশনে প্রতিবেদন প্রচার হলে সর্বত্রই আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সচিত্র প্রতিবেদন দেখে নড়েচড়ে বসে খাদ্য বিভাগ ও কৃষি বিভাগসহ স্থানীয় ধান সংগ্রহ কমিটি। পরে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম স্থগিত করে তালিকা পুনরায় যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগকে পত্র দেয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা।

জেলা খাদ্য বিভাগের পত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ খাজানুর রহমান জানান, প্রত্যেক ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্বাচিত কৃষকের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকৃত কৃষকদের বাছাইয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। দ্রুতই একটি স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করে কৃষকদের কাছে থেকে ধান ক্রয় করা হবে। এছাড়া পূর্বের তালিকা তৈরিতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কোন অবহেলা ও গাফিলতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চলতি মৌসুমে সাদুল্লাপুর উপজেলার দুটি খাদ্য গুদামে গত ১৩ মে ২৬ টাকা দরে ২৯৫২ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে ১১ ইউনিয়নে লটারিতে নির্বাচিত ২ হাজার ১২০ জন কৃষকের তালিকা প্রকাশে অনিয়ম ও নানা অসঙ্গতির অভিযোগ ওঠে। সরেজমিন অনুসন্ধানে দামোদরপুর ইউনিয়নের কৃষকের তালিকায় নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতির প্রমাণও পাওয়া যায়।

দেখা যায়, তালিকায় ভিটেমাটি ছাড়া ফসলি জমি নেই, কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত নন এমন অনেক ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অনেক প্রকৃত কৃষকের নাম বাদ গেলেও তালিকায় দেখা যায় মৃত্যু ব্যক্তি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও চাকুরীজীবীসহ অনেকের নাম। এছাড়া বাবা-ছেলে ও ভাইসহ একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শুধু দামোদরপুর ইউনিয়নেই নয়, কৃষকের তালিকায় এমন অনিয়ম-অসঙ্গতির চিত্র পাওয়া গেছে সাদুল্লাপুর উপজেলার ১১ ইউনিয়নজুড়েই। সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজসে মনগড়া ও পছন্দের কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত করেন, এমন অভিযোগ এলাকার প্রকৃত কৃষক ও সচেতন মহলের।

অপরদিকে, লটারির নির্বাচিত অধিকাংশ কৃষকদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কৃষি কার্ড হাতিয়ে নিতে মাঠে সক্রিয় একটি সিন্ডিকেট চক্র। অনুসন্ধানে লালবাজার এলাকায় মোজাম্মেল নামে এক ব্যবসায়ী কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের কার্ড কেনার কথা স্বীকার করে বলেন, ধান দিতে সামর্থ্য ও আগ্রহ নেই এমন কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কার্ড ক্রয় করছেন তিনি। এসময় তার মতো অনেক ব্যবসায়ী কৃষকের কার্ড কিনে গুদামে ধান দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। এছাড়া লটারিতে নির্বাচিত জামুডাঙ্গা গ্রামের ডিপটি ও আহাদুন্নবীসহ একাধিক কৃষক মোজাম্মেলের কাছে তাদের কার্ড বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন।

Exit mobile version