Site icon Jamuna Television

এটা টাইগার রাকিবের গল্প

রাকিব (১২)

খরস্রোতা বিষখালীর তীরে বেড়ে উঠছে বারো বছরের রাকিব। এই বয়সেই শক্ত হাতে হাল ধরতে হয়েছে সংসারের। চৈত্রের খরতাপ, বিষখালীর উত্তাল ঢেউ আর হাড়ভাঙা খাটুনিতেই চলছে যার জীবন সংগ্রাম।

বরগুনার পাথরঘাটায় ১২ বছরের রাকিবের আয়েই চলে তার চার সদস্যের সংসার। কখনও ইটভাটার শ্রমিক হয়ে, কখনও ট্রলারের হাল ধরে, কখনোবা দোকান নিয়েই চলে তার জীবনযুদ্ধ। তার জীবন যুদ্ধে মুগ্ধ হয়ে স্থানীয়রা ভালোবেসে তার নাম দিয়েছেন ‘টাইগার রাকিব’।

স্থানীয়রা বলছেন, ও (রাকিব) আমাদের সাথে বড় মানুষের মতো খেয়া বায়, ইটভাটায় কাজ করে, দোকান চালায়, মাছ ধরে। এত ছোট মানুষ হয়েও সে সাহস নিয়ে এসব করে, তাই তাকে আমরা ‘টাইগার রাকিব’ বলে ডাকি।

নিজের কাজ-জীবন ইত্যাদি নিয়ে জানতে চাইলে রাকিব বলে, আমার ছোটবোনটা স্কুলে পড়ে, ওরে পড়াই। আমার বাবা আমাদের জন্য কোনো জায়গা-জমি কিছুই রেখে যাননি। সব খেয়ে, বিক্রি করে শেষ করেছেন। আমরা খাবো কী, থাকবো কোথায়, বাঁচবো কীভাবে এসব নিয়ে ভাবেননি তিনি।

শুধু রাকিবই নয়। জীবন যুদ্ধের আরেক অদম্য যোদ্ধা রাকিবেরই আপন ছোট বোন ফারজানা। সে কাজ করে ইটভাটায়। এক হাজার ইট শুকিয়ে পায় মাত্র ১৫ টাকা। সেও এক বাঘিনী বটে।

ফারজানা বললো, আমি এই ইটভাটায় ইট ওঠানোর কাজ করি। এক হাজার ইট ওঠালে আমাকে ১৫ টাকা দেয়। কষ্টের কাজ করতে চাই না, আমি লেখাপড়া করতে চাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাকিবের বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। থাকেন প্রথম পক্ষের স্ত্রী-সন্তানের সাথে। মানসিক ভারসাম্যহীন মা, নানী আর ছোটবোন ফারজানাকে নিয়ে রাকিবদের সংসার। অসুস্থ হলেও সন্তানকে নিয়ে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন রাকিবের মায়ের। রাকিব-ফারজানার মা খাদিজা বেগম বলেন, মেয়েটাকে যদি লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিত করতে পারি, তাহলে তাকে ডাক্তার বানাতে চাই।

রাকিব-ফারজানার জীবনের গল্প শুনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ফোনে যমুনা নিউজকে জানান, খুব জলদিই খবর নেবো। যদি ঘরের ব্যবস্থা করতে হয় সেটাও করবো। আর যদি কর্মসংস্থানের দরকার হয় তাহলে আমরা তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দেবো।

টাইগার রাকিব ফিরে যাক স্কুলে, ফারজানার হাতে ইটের বদলে উঠুক স্টেথোস্কোপ, এটাই প্রত্যাশা এখন স্থানীয়দের।

/এসএইচ

Exit mobile version