আসামের গৌহাটির বাসিন্দা মোহাম্মদ আজমল হক। ৩০ বছর ধরে কাজ করেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। গত বছর অবসর নিয়েছেন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার হিসেবে। আগামী ১৩ অক্টোবর আজমল হকের জীবনে বিশেষ একটি দিন। কারণ ঐদিন তাকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ভারতের নাগরিক!

আজমল হককে দেয়া সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রত্যয়ন পত্র
এবার, ‘সন্দেহজনক ভোটার’ হিসেবে বিবেচনা করে আসামের ফরেনার ট্রাইব্যুনাল আজমলের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। ১৩ অক্টোবর তাকে দলিল-দস্তাবেজসহ হাজির হয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসী নন।
আজমল হকের কাছে পাঠানো ফরেনার ট্রাইব্যুনালে চিঠিতে বলা হয়, তিনি যে জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক তার স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে। ১১ সেপ্টেম্বরের আগে তাকে প্রমাণ হাজির করতে বললেও নোটিশটি তার কাছে পৌঁছায় সময় শেষ হয়ে যাবার পরে! পরে আরেকটি নোটিশ দেয়া হয় যেখানে অক্টোবরের ১৩ তারিখ তাকে ট্রাইব্যুনালের হাজিরা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আগ্রহ জাগতে পারে, ফরেনার ট্রাইব্যুনাল কী?
অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে আসামে বেশ কয়েকটি ‘ফরেনার ট্রাইব্যুনাল’ স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৬৪ সালের ‘ফরেনার অর্ডার’ অনুযায়ী এই ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়। যে সকল ব্যক্তির ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ আছে তা খতিয়ে দেখে ফরেনার ট্রাইব্যুনাল।
এই ধরনের ট্রাইব্যুনাল প্রথম দৃশ্যমান হয় ১৯৮৫ সালে, অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাথে রাজিব গান্ধী সরকারের চুক্তির পর। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে যেসব বাংলাদেশি অবৈধভাবে আসামে ঢুকে পড়েছে তাদের শনাক্ত ও প্রত্যাবাসন করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।
অবৈধ অভিবাসনের ক্রমাগত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০-তে! আসামের সর্বশেষ নির্বাচনেও এটি একটি বড় ইস্যু ছিল। বিজেপি’র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক
আসামের সর্বানন্দ সনোয়াল সরকার এসব ফরেনার ট্রাইব্যুনালকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।

আজমল হককে পাঠানো ফরেন ট্রাইব্যুনালের নোটিশ
আজমল হকের ঘটনাটিকে ‘কিম্ভুতকিমাকার’ বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। তার কাছে পাঠানো সমনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও জাতীয় অভ্যুত্থানের সময় তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে পৌঁছান। এর প্রতিক্রিয়ায় বেদনায় ভারাক্রান্ত আজমল হক জানান, তার বাবা মাহবুব আলী ভারতের নাগরিক। ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় ও ১৯৬১-৬২ সালের গ্রাম জরিপে মাহবুব আলীর নাম তালিকাভুক্ত ছিল। তার মা রহিমন নেছা ১৯৫১ সালের ‘জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনে’ তালিকাভুক্ত ছিলেন।
আজমল হকের পক্ষে তার আইনজীবী আমান ওয়াদুদ কিছু দালিলিক প্রমাণ টুইটারে শেয়ার করেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, আজমল ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৬ সালে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ভারতের সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন আজমল।
মজার বিষয় হলো, সম্প্রতি আজমল হক একটি ব্যাংকের কাস্টমার সেন্টারের ফ্রাঞ্চাইজ চেয়ে আবেদন করেছেন। এজন্য, পুলিশ কর্মকর্তারা পরিদর্শন ও যাচাই শেষে তাকে ছাড়পত্রও দিয়েছে। ফলে, দেশটির ফরেনার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।
(ভারতীয় গণমাধ্যম অবলম্বনে তোয়াহা ফারুক)
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply