Site icon Jamuna Television

৫৬ শতাংশ নয়, পোশাক খাতে বাস্তবে ন্যূনতম মজুরি বেড়েছে ২৫-২৯ শতাংশ: টিআইবি

পোশাক খাতে শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধির হারে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ বিষয়ে নিজেদের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান করে মজুরি বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে টিআইবি। আরও জানায়, পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৫২-৫৬ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবে বৃদ্ধির হার ২৫ থেকে ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

মজুরি বোর্ডকে টিআইবির দেয়া চিঠিতে বলা হয়, বছরে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময়মূল্যের ঊর্দ্ধগতি বিবেচনায় পোশাক শ্রমিকদের মজুরি প্রকৃত অর্থে ৩০ শতাংশও বাড়েনি। পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত নিম্নতম মজুরি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়।

আরও বলা হয়, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত নিম্নতম মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বৃদ্ধির নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসেবে পূর্ববর্তী গ্রেড সাত বা নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে মূল মজুরি ন্যূনতম ৫ হাজার ২৩২.৭৫ টাকা হওয়ার কথা। এই গ্রেডে প্রস্তাবিত নতুন মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৬৭০০ টাকা। অর্থাৎ এই গ্রেডে মূল মজুরি ৬৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও তা প্রকৃতপক্ষে বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

গ্রেড চারের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড তিন, দুই ও একের ক্ষেত্রে মূল মজুরি প্রকৃত বৃদ্ধি পাবে ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রতিবছর মূল মজুরি ৫ শতাংশ হারে বাড়লে ২০২৩ সালে এসে নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ন্যূনতম মোট মজুরি টাকা হওয়ার কথা ৯ হাজার ৬৯৯.১৩ টাকা। নতুন প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী এই গ্রেডে সর্বমোট মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে ১২৫০০ টাকা। অর্থাৎ, ৫৬ শতাংশ সর্বমোট মজুরি বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও তা প্রকৃত বিচারে বেড়েছে মাত্র ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড চার, তিন, দুই ও একের ক্ষেত্রে মোট মজুরি বৃদ্ধির হার যথাক্রমে মাত্র ২৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং ২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

আবার, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার আরও কম। মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা হলে পঞ্চম গ্রেডে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মূল মজুরি হওয়ার কথা ৫ হাজার ৫৭২.২৬ টাকা, যেখানে নতুন প্রস্তাবিত মূল মজুরি ৬৭০০ টাকা। অর্থাৎ, মূল মজুরি ৬৩ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে বলা হলেও তা মূলত বাড়ছে ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড চার, তিন, দুই ও একের ক্ষেত্রে মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ১১ শতাংশে।

সর্বমোট মজুরির হিসাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে একজন শ্রমিকের ৯ হাজার ৯১৩.৫০ টাকা পাওয়ার কথা। সর্বমোট মজুরি এই গ্রেডে ৫৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে বলা হলেও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে সর্বমোট মজুরি বৃদ্ধির হার মাত্র ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় গ্রেড চার, তিন, দুই ও একের ক্ষেত্রে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ, ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূল মজুরি সর্বমোট মজুরির ৬০ শতাংশ ধরা হলেও বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী তা ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে বছর প্রতি ৫ শতাংশ মূল মজুরি বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হলেও সামনের দিনে তুলনামূলক কম মজুরি বাড়বে শ্রমিকদের। যা এই মজুরি কাঠামোর বড় দুর্বলতা।

তাই শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণাকে শুভঙ্করের ফাঁকি বলে উল্লেখ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বললেন, নতুন মজুরি কাঠামোতে শ্রমিকের ন্যূনতম জীবনমান ও প্রয়োজন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে জীবনযাপন ব্যয় ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়সমূহ মোটেই গুরুত্ব পায়নি।

এছাড়া, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে চার শ্রমিকের জীবনহানির ঘটনাকে চরম দুঃখজনক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ। সেখানে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক মজুরি না দেয়াটা লজ্জাজনক। একইভাবে বিব্রতকর বিষয় হচ্ছে,  এই খাতে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে কম মজুরি দিয়ে আসছে। যা নতুন বেতন কাঠামোতেও অব্যাহত থাকবে।

/এমএইচ/এমএন

Exit mobile version