Site icon Jamuna Television

বিনা বেতনে স্বেচ্ছাশ্রমে ৪ বছর ধরে রেলের গেটকিপার কলেজ ছাত্র!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের রাজারহাট রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে স্বেচ্ছায় গেটকিপারের দায়িত্বপালন করছেন আল-আমিন নামের এক কলেজ ছাত্র। দরিদ্র পরিবারের বড় সন্তান হয়েও দুর্ঘটনা থেকে শত-শত স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের রক্ষা করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আল আমিন।

এলাকাবাসীরা জানান, তিস্তা-রমনা রেললাইনের মধ্যবর্তী রাজারহাট রেল স্টেশন পৌঁছানোর আগে রাজারহাট সরকারী বালিকা বিদ্যালয় ও রাজারহাট আদর্শ মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজারহাট কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ হয়ে রাজারহাট আদর্শ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের সংযোগ সড়কে রেল লাইন পারাপারে রেলওয়ে ডিপার্টমেন্টের ট্রাফিক বিভাগীয় আওতাধীন গেট নং-টি/১৪জি রয়েছে। এখানে দুর্ঘটনা এড়াতে গতিরোধক ব্যারিয়ার ও লেবেলক্রসিংয়ের ঘর তৈরি করা হলেও কোন গেটকিপার না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ দুঃসময়ে আল আমিন (১৮) নামের এক কলেজ ছাত্র যানমাল রক্ষার্থে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন।

জানা যায়, আল-আমিন উপজেলার রাজারহাট ইউনিয়নের মেকুরটারী গ্রামের চা বিক্রেতা দরিদ্র পরিবারের আক্কাস আলীর বড় ছেলে। পরিবারের মধ্যে সবার বড় হওয়ায় বাবার পাশাপাশি তাকেও সংসারের হাল ধরতে হয়। এরপরও থেমে নেই তার অদম্যতা। আল আমিন রেলক্রসিংয়ের গেট কিপার আর চা বিক্রির পাশাপাশি রাজারহাট মীর ইসমাইল হোসেন সরকারী কলেজের বিএম শাখায় এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র।

আল আমিন জানায়, তার সাথে রয়েছে তিস্তা, চায়না বাজার, কাশেম বাজার, সিঙ্গেরডাবরী, টগরাইহাট, রাজারহাট(পূর্ব) গেট কিপারদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। তাদের সাথে সমন্বয় করে প্রতিনিয়ত ট্রেন আসার আগেই গতিরোধক ব্যারিয়ার সিগন্যাল ফেলে শতশত স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের যানমাল রক্ষা করছেন।

রোববার সকালে সরেজমিনে আল-আমিনের সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, ৪ বছর ধরে স্বেচ্ছায় গেটম্যানের কাজ করছেন তিনি। ২ বছর আগে রেল ডিপার্টমেন্টের আওতায় ট্রাফিক বিভাগের আওতাধীন টি/১৪জি গেটে দুর্ঘটনা এড়াতে গতিরোধক ব্যারিয়ার ও লেবেলক্রসিংয়ের ঘর তৈরি করা হয়। কিন্তু কোন গেট কিপার না থাকায় ঠিকাদার তার হাতে ওই লেবেলক্রসিং ঘর ও ব্যারিয়ারের চাবি তুলে দেন। এরপর থেকে সে নিয়মিত গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করছে। সকাল, দুপুর ও রাতে প্রায় নির্দিষ্ট সময়ে এ রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। তাই পড়াশুনার পাশাপাশি এ কাজটা তিনি করেন।

এ ব্যাপারে রোববার রাজারহাট রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাইদুল ইসলাম জানান, ট্রেন আসলে আল আমিন নামের এক ছেলে ওই গেটে ব্যারিয়ার উঠানামা করে।

রাজারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ এনামুল হক জানান, আল আমিনকে নিজে গেট কিপারের দায়িত্বপালন করতে দেখে হতভম্ব হয়ে যাই। তার পছন্দের এই চাকরিটা স্থায়ী হলে দরিদ্র পরিবারের দুঃখ লাঘব হতো। তাই রেল ডিপার্টমেন্টের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

টিবিজেড/

Exit mobile version