Site icon Jamuna Television

চাকুরী শেষ হয়েছে, আজো বেতন হয়নি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের পি.ডি.আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন সুকুমার সাহা। দীর্ঘদিন এই বিদ্যালয়ে ছাত্র পড়িয়েছেন, কিন্তু কোনো বেতন পাননি। বেতন ছাড়াই তাকে চাকুরী থেকে অবসরে যেতে হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় বিনা বেতনে পাঠদান করতে হয়েছে এই গনিত শিক্ষককে। এখন খালি হাতে পরিবারে ফিরে লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারেন না। সারাক্ষণই নিজেকে লুকিয়ে রাখেন।

সুকুমার সাহা জানান, ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিঘলগ্রাম গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় পি.ডি.আর (পিড়াগাতি-দিঘলগ্রাম-রুপদাহ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর কোনো গনিতের শিক্ষক ছিলনা বিধায় তাকে সেখানে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, শিক্ষকতা পেশাটা তার কাছে খুব ভালো লেগেছিল তাই তিনি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অনুরোধে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। কর্তৃপক্ষ ২০০৪ সালে তাকে নিয়োগ দেন। এরপর থেকে তিনি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের গনিত পড়াতেন। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে গেছেন।

কিন্তু দীর্ঘ এই চাকুরী জীবনে তিনি কোনো বেতন পাননি। এমনকি বিদ্যালয়টি হতদরিদ্র এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সেখানেও তেমন কোনো আয় ছিল না। যে কারণে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তিনি কিছুই পাননি। আবার প্রতিষ্ঠানে বেশি সময় দেওয়ায় নিজে কোনো প্রাইভেট পড়ানোর সঙ্গেও যুক্ত হননি। এরই মধ্যে আরো ভালো পাঠদানের স্বার্থে ২০০৯ সালে তিনি বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, কর্মজীবন শেষ করলেন বেতন ছাড়া। যাবার সময়ও কিছুই পেলেন না। এই অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের সামনে মুখ দেখাতে এখন খুব কষ্ট হয়। তারপরও মাঝে মধ্যে প্রতিষ্ঠানে যান, সেখানে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে সময় কাটান। তিনি জানান, স্ত্রী উৎপলা সাহা একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলে শিক্ষকতা করে। বাড়িতে কিছু বাচ্চা পড়ান তিনি। তার টাকায় চলে সংসার। তার এই কঠিন জীবন নিয়ে কারো কি কিছুই করার নেই এই প্রশ্ন সুকুমার সাহার।

পিডিআর মাধ্যামিক বিদ্যালয় এর বর্তমান প্রধান শিক্ষক আকরামুল কবির জানান, এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী ২০০০ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হয়নি। যে কারনে সুকুমার সাহাকে বেতন ছাড়াই চলে যেতে হয়েছে। আরো কয়েকজন আছে তাদের অবস্থাও একই। প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এমপিও ভুক্তি না হলে ওই শিক্ষকদের অবস্থাও সুকুমার সাহার মতোই হবে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ খাঁন জানান, বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ের। এই সব শিক্ষকদের নিয়ে তাদের কিছুই করার ও বলার সেই। তবে শিক্ষকরা উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন কিছু হয় কি না।

Exit mobile version